Custom Search

Thursday 9 July 2015

“কেউ চোখের জল ফালায়
কেউ রক্ত ঝরায়
ভালোবাসা তবু মরে যায়
আমি শুদু চেয়েছি তোমায়”
বাংলা ২য় পরীক্ষার written part এর রচনা
অংশ লিখছি। সারা সকাল থেকেই মন এক
অদ্ভুত ভালো লাগায় বিরাজমান ছিল। কেন?-
তা ধরতে পারছিলাম না বলে একটু খুঁতখুঁতানি
থাকলেও ভালো লাগার কাছে হার মেনে তা
অনেক আগেই ঘুমিয়ে পরেছে। এস.এস.সি পরীক্ষা
নিয়ে যে ভয় বা আতঙ্ক ছিল তা গত কালকেই
শেষ হয়ে গেছে। আজ প্রশ্ন পেয়ে এক ঝলক
তাকিয়েই লিখতে শুরু করলাম। বেশ চলছিল-
অপ্রত্যাশিত ভাবে রিনরিনে গলায় কারো হাসি
শুনে কলম নিজে নিজেই থেমে গেল।ভেবেই কুল
পেলাম না, এস.এস.সি পরীক্ষা চলছে যেখানে
কিনা সারা ক্লাশ নিস্তব্দ হয়ে আছে তার মধ্যে
এভাবে কেউ হেসে উঠতে পারে।দ্রুত শব্দের
উৎসের দিকে তাকালাম,মনে হয় আমি একা না-
পুরো ক্লাসই সেদিকে দৃষ্টি দিলো। তাকিয়ে
বোকা বনে গেলাম-আমার বেঞ্চের পাশে বসে
থাকা মেয়েটা, আমার দিকে একবার তাকাচ্ছে আর
রিনরিনে গলায় হেসেই চলেছে।নিজেকে
ক্ষণকালের জন্য চিড়িয়াখানার এক আজব
চিড়িয়া বলে মনে হল। কিন্তু বিরক্ত হওয়ার
থেকে আমার মন-প্রান জুরে এক মুগ্ধতা কাজ
করছিলো। কারো হাসি এতো সুন্দর হতে
পারে!!! ভরা পুকুরে একটা ঢিল ছুড়লে সমস্ত
পুকুরে যেমন আলোড়ন সৃষ্টি হয়-মেয়েটার হাসিও
তেমনই ভাবে আমার হৃদয় মন্দিরে বারবার
আন্দোলিত হতে লাগল।হঠাত ভুল ভাঙল
মেয়েটা আমায় দেখছে না-আমার খাতার দিকে
তাকিয়ে হাসছিল। তারাতারি খাতার লেখার দিকে
মনোনিবেশ করলাম –তেমন কোন ভুলই খুজে
পেলাম না শুদু এক জায়গায় রবীন্দ্রনাথের
কবিতার কিছু অংশ মনে আসছিলো না বলে
নিজে বানিয়ে কিছু লিখে রেখেছি কিন্তু এর
সুবাদে পরীক্ষা হলে এভাবে কেউ হাসতে পারে!!
মেয়েটার যেন ভয়-ঢর নেই। স্মিত হেসে ভাবলাম
থাকবেই বা কি করে যেখানে ম্যাজিস্ট্রেট ও হল
সুপার এসে পরিক্ষারতির খোজ নিয়ে যায়! –
এরকম সুযোগ থাকলে তো নাচতে-নাচতে
পরীক্ষা শেষ করতাম । কেন,জানি না মেয়েটার
উপর খুব রাগ হল। ধমক দিতে গিয়ে থেমে গেলাম।
পর্যবেক্ষক ম্যাডাম এদিকেই
আসছে...............
“কি ব্যাপার,এতো হাসির কি হল?
“সরি ম্যাম,আর হবে না”-বলেই মেয়েটা একবার
আমার দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে ফেলল।
ম্যাডামও আড়চোখে আমাকে দেখলেন।কি
বুঝলেন জানি না-চলে গেলেন।কিন্তু আমি এর
মাথামুণ্ড কিছুই মেলাতে পারলাম না।কড়া
চোখে মেয়েটার দিকে আবার তাকালাম।মেয়েটা
হাসি আটকানর জন্য মনে হয় দাঁতে-দাত চেপে
রেখেছে কিন্তু তারপরও পারছে না-সারা শরীর
হাঁসির রেশে কাপছে। মনে হয় বল্লাম,এই জন্যে-
আমি এখন পর্যন্ত মুখ দেখা তো দুরের কথা অর
নাম ই জানি না। প্রথম দিন এসেই দেখলাম
আমার বেঞ্চের পাশে মুখ থেকে সারা শরীরে ঢাকা
বোরখা পরা একটা মেয়ে বসে আছে।আমি কিছুটা
বিরক্ত হলেও কিছুই করার ছিল না।মাছে যাদের
অ্যালার্জি আছে, মাছ দেখলে তাদের যেমন হয়
তারা আমার কষ্টটা বুঝতে পারবে।ট্রাকের পিছনে
যেমন লেখা থাকে ১০০ হাত দূরে থাকুন তেমনই
মেয়েদের থেকে আমি ১০০ হাত দূরে থাকারই
চেষ্টা করতাম।কেননা, মেয়ে মানেই হাজারটা
প্রবলেম!! বাকি পরীক্ষাটুকুতে আর ভালো ভাবে
মনোনিবেশ করতে পারলাম না-মন পরে রইল
অই দুর্ভেদ্য রহসসের উপর।।
পরের পরীক্ষা ছিল গনিত।অংক করতে আমার
ভালই লাগত আর এর সৃজনশীল অংশে ভালই
নম্বর পেতাম। সেদিন একটু আগেই পরীক্ষা
কেন্দ্রে গেলাম দেখলাম,পাশের সিটটা খালি-
তারমানে এখনও আসেনি ও। মেয়েটা একটা
রহস্যই হয়ে থাকল আমার জন্য।
পাশের জানালাটা খুলে দিলাম। সোনালি আলো
নয়,আগুনের চাবুক দিয়ে পটুয়াখালি শাসন করছে
সূর্য।সেই অত্যাচারে উৎসাহিত হয়ে বসন্তের
স্বাভাবিক আবহাওয়ার সঙ্গে বিশ্বাস ঘাতকতা
করেছে রোদ্রের তেজ। কলির আশ্রয় ছেরে দুই
একটা নাম না জানা ফুল বোকার মত উকি
দিয়েছিলো এদিক-সেদিক, নির্দয় উত্তাপের
কাছে ধর্ষিতা হয়ে মুখ থুবড়ে পরে আছে এখন।
হটাত চেতনা এল.........
“তোমায় কথাটা সেদিনই বলা উচিত ছিল কিন্তু
হয়ে উঠল না......”
এতো সুন্দর করে কেউ যে কথা বলতে পারে,আর
হাঁসির ন্যায় কি সুন্দর কণ্ঠ ওর!! আগান্তুক
আর কেউ নয় আমার বেঞ্চের পাশে বসা সেই
মেয়েটি।কিন্তু কি কথা বুঝতে না পেরে আমার
বিস্ময়ভরা মুখটি দেখে ও হেসে ফেলল। তারপর
ঘার দুলিয়ে দুলিয়ে বলল, “ঐদিন কতগুলো
নৈব্রিত্তিক বলে দিলে,সে জন্য ধন্যবাদ। আসলে
লেখকদেরে জন্মসাল আমার মনেই থাকে না।“
কি বলা উচিত ভেবে পেলাম না।মার্কামারা
আমার হাসিটা দিয়ে ওর সমস্ত কৃতজ্ঞতাটুকু
আন্তরিকতার সাথে গ্রহন করলাম। পাশে বসল
ও।আমি ভালভাবে ওকে পর্যবেক্ষণ করা শুরু
করলাম। এই আমি কিনা মেয়েদের এড়িয়ে চলতাম
কিন্তু কি এমন হল যে রহস্যময়ি এ মেয়েটি
বারবার তার দিকে আমায় আকর্ষণ করছে।।
পূর্বের মত কাল বোরকায় মুখ থেকে পা পর্যন্ত
আবৃত করা। আশ্চর্য হয়ে লক্ষ করলাম-অপূর্ব
সুন্দর একজোড়া কালো চোখ।মুষলধারায়
বৃষ্টির পর গাছপালা যেমন সবুজ-সতেজ দেখায়
ওর দু চোখে রয়েছে অবিকল সেই সজীবতা।
বাঙময় সেই চোখ জোড়া নিঃশব্দের ভাষায় কি
যেন বলতে চায় সর্বক্ষণ। কি যেন হল ওর?-
আড়মোড়া ভেঙে আমার বিপরীত দিকে ফিরে
হাত দিয়ে মুখে ঢাকা নেকাবটা খুলছে। ওর মুখের
দিকে তাকানোর পর পৃথিবীর সমস্ত সৌন্দর্য
ম্লান হয়ে গেল আমার কাছে।
ওর মুখটা না গোলাকার না লম্বাটে বরং দুটোর
মাঝা-মাঝি।ঠোট দুটো গোলাকার পাপড়ির মত,
টকটকে লালও নয় আবার কিছু কমও নয়।নাকটা
সরু লম্বা- ঠিক যতটুকু হলে অপূর্ব সুন্দর একটা
চেহারার সঙ্গে মানানসই হয়। সুদৃশ্য কোন
কারিগর শামুক-ঝিনুকের খোলস কেটে ওর জন্য
তৈরি করেছে অদ্ভুত সুন্দর গহনা। ওর কপালটা
ঢালু চওড়া। ধনুকের মত বাঁকা ভ্রু জোড়া আরও
লাবণ্যময়ী করে তুলেছে ওকে। লম্বা পাপড়ি
গুলো দক্ষ প্রহরীর মতন পাহারা দিচ্ছে
অতুলনিয় সুন্দর দু চোখকে। মনি দুটো যেন দুধ
সাদা আকাশে স্বচ্ছ টলমল দুটো দ্বিপ।
সৌন্দর্যের দংশনে বিষধর সাপে কাটা মানুষের
মত স্থির হয়ে গেলাম আমি। ওর প্রচণ্ড রূপের
স্রতে ভেসে গেলো আমার সকল বাধ। ওর
সৌন্দর্য আমার কাছ থেকে কেড়ে নিল আমার
পরিচয়,ভুলিয়ে দিলো আমার উদ্দেশ্য।
ও আমায় কিছু বলতেছে কিন্তু আমি যেন কিছুই
শুনছি না শুদু ওর লাস্যময়ী ঠোট দুটোকে
কয়েকবার নড়তে দেখলাম।
“কি হল...............” আমি মুগ্ধ দৃষ্টিতে
তাকিয়ে আছি দেখে কথা থামাল মেয়েটা।কিছুটা
লজ্জা পেয়ে দৃষ্টি নত করল। হুঁশ হল যেন
আমার,পরিস্থিতি সামলাতে আমতা আমতা করে
বললাম, “কি যেন, বলছিলে তুমি??”
“তোমার প্রস্তুতি কেমন?”
আমার আর উত্তর দেয়া হল না। পর্যবেক্ষক
শিক্ষক খাতা দিয়ে গেলেন। মানুষের জীবনে বেশ
কিছু ঘটনার সমাবেশ ঘটে, কিছু থাকে সৃতির
পাতায় আর কিছু ভাসে চোখের পাতায়। এই
পরীক্ষার দিনটিও ছিল চোখ বুঝলে ভেসে ওঠার
মত একটা ঘটনা।
পরীক্ষাটি ভালভাবেই শেষ করলাম,বলতে গেলে
বাকিগুলোর থেকে বেশ ভালভাবেই।কিন্তু
পরীক্ষার সময় ওর সাথে যে খুনসুটি চলছিল,তা
কি শুদু কয়েকটি শব্দের দ্বারাই প্রকাশ করা
সম্ভব!!!!! যদি সম্ভব হত তাহলে গল্প না
হলেও আমার জীবনের সেরা কিছু কথোপকথন
হত।।
কয়েকটি পরীক্ষার পর আঙ্কেল-আনটির সাথে
বন্ধু বলে পরিচয় করিয়ে দিলো ও। বন্ধু! মন
থেকে তো কবেই ওর সাথে বন্ধুত্ব হয়ে গেছে
কিন্তু আজ সেটাই লিখিত ভাবে হল। আররে,
ওর নামই তো জানানো হয় নি। ওর
নাম,আহির-অদ্ভুত না?! অদ্ভুত এবং
শুন্দর,অন্তত আমার কাছে। সত্যিই অবাক করার
মতনই মেয়ে-আহির।প্রথম ওকে দেখলে মনে হয়
শান্ত নদীর মত।কিন্তু কিছুদিন পরই বুঝতে
পারলাম, প্রানচাঞ্চল্লে ভরপুর এই মেয়েটি।
স্বতঃস্ফূর্ত এবং সাদিনচেতা যেন এক ‘বহমান
নদী’ ।
এক্সাম শেষ হয়ে গেছে কিন্তু থেমে থাকেনি ওর
চঞ্চলতা। সেদিন হটাত ফোন দিয়ে বলল,
“একটা গান শুনাও তো?”
এ আমার কাছে নতুন কিছু না- এরকম হাজারও
পাগলামি ভির করে ওর মধ্যে।। আর আমিও এই
পাগলিটার পাগলামো খুব উপভোগ করি-।।
ভালোবাসা এক অদ্ভুত অনুভুতি।। যতটা না
মানুষকে এই অনুভূতিতে সিক্ত হতে দেখেছি তার
থেকে বেশি কল্পনায় আমি এর স্বাদ নিয়েছি।।
প্রতিদিনই নিজের ভিতর অন্য কারো ছবি
আকার চেষ্টা করতাম কিন্তু একসময় সব ঝাপসা
লাগত। কিন্তু এখন চোখ বুঝলেই ঐ পাগলিটার
মুখটি ভেসে উঠে।। অনেক দিন হয়ে গেলো-
ভাবছি ওকে প্রপস করব, হচ্ছে না।। মাঝে মাঝে
এত সাহস জুগিয়ে ওর সামনে এসে দাঁড়ালেই সব
ওলটপালট হয়ে যায়।। অনেক চেষ্টা করে কয়েকটি
লাইন মাথায় আসলো-মোটামুটি এরকম------
" মেঘটা এসে চাঁদটাকে দিয়েছে ঢেকে,
অবুঝ হৃদয় চলেছে এখনও তোমায় ডেকে ,
দূরন্ত বাতাস আবেগ বাড়িয়ে দিচ্ছে দোলা ,
চাইলে আসতে পার হৃদয় দরজা রেখেছি খোলা ।
আবেগ যেন সাগর ঊর্মি ,অঢেল রাশি রাশি ,
বলতে গিয়ে থমকে দাড়াই তোমায় ভালবাসি । "
নিজেকে কবিগুরুর ও গুরু মনে হচ্ছে ! কালকে ঠিক
সেখানে ওকে প্রপৌজ করব -যেখানে প্রথম কথা
বলেছি।। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন।।
বিঃদ্রঃ আমার মনের সমস্ত অনুভূতি নিয়ে যে
এই সুন্দর পৃথিবীতে বিরাজমান। এই গল্পটি তার
জন্যই উৎসর্গকৃত।।
লেখাঃ ধূসর পাণ্ডুলিপি

No comments:

Post a Comment